আমি অনেকদিন যাবৎ বাংলা ছবি দেখিনা। ছবির ট্রেলার দেখেই উৎসাহ জাগেনা, দেখা তো দূর অস্ত! তাই ইদানিং বাংলা ছবি খারাপ কি ভালো সেই নিয়ে বক্তব্য রাখার খোরাক মজুদ নেই। কিন্তু এই সময়ে একটা বাংলা ছবির কথা মনে পড়লো যা শেষ কয়েক বছরে দেখা বাংলা সিনেমাগুলোর মধ্যে বেশ ভালো লেগেছিল। প্রায় বছর তেরো আগে দেখা; 'তিন ইয়ারি কথা'!
ছবিটা একজন স্যার পেনড্রাইভে পুরে দিয়েছিল পকেটে। আমাদের পাড়ায় অনেককে সিডিতে ডিস্ট্রিবিউট করেছি। জলালুর বোম্বে সেলুনে রাত হলেই টিভিতে চালিয়ে দিত। সেলুনে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা হাসতাম দৃশ্যগুলো নিয়ে। যে বন্ধুদের দেখিয়েছিলাম তারা আজও ছবিটার অনেক দৃশ্য মনে করিয়ে মজা করে। ঠিক যেমনটা 'গ্যাংস ওফ ওয়াসিপুর' ছবিটা দেখে হয়েছিল। আমি বস্তি অঞ্চলে মুখে মুখে 'গ্যাংস ওফ ওয়াসিপুর' ছবির সংলাপ ঘুরতে শুনেছি। খুব কম ছবিই ক্ষমতা রাখে মানুষের মনে এরকম জায়গা করে নিতে। 'তিন ইয়ারি কথা' ছবিটার পরিচালক ছিলেন অভিজিৎ গুহ এবং সুদেষ্ণা রায়। সম্ভবত ছবিটা প্রোডিউসার-ডিস্ট্রিবিউটরের ক্যাচালে হলে মুক্তি পায়নি।
এই ছবিতে এমন কি ছিল যে চরিত্রগুলো আজ মনে থেকে গেছে? এখানেই ছবিটার সাফল্য। চরিত্রগুলো ছিল আমার-আপনার রক্তমাংসের ছাপোষা মানুষ। বিলু সংবাদপত্র-ম্যাগাজিন বিক্রেতা, অন্তু থিয়েটার অভিনেতা ও বেকার এবং শ্যামল অটোচালক। একটা মফস্বল ঘিরে গল্প। এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে অনেক দূরে ফেলে আসা বাংলা ছবির চরিত্রগুলো এখানে আবার যেন সশরীরে হাজির হয়েছিল, যাদের অনুভব করা যায়। 'বসন্ত বিলাপ' বা 'সাড়ে চুয়াত্তর' যে জগতের সৎ প্রতিফলন ঘটিয়েছিল পর্দায় তারা আবার যেন হাজির এই ছবিতে। সেই মজা, পাওয়া-না পাওয়া, মধ্যবিত্ত জীবনের প্রতিফলন এখানে উপস্থিত। সে অর্থে কোন নিরেট গল্প নেই- আমাদের চারপাশের চেনা চরিত্রদের, ফেলে আসা সময়কে প্রতিফলিত করে। সংলাপ শুনে মনে হয় সদ্য মুক্ত অর্থনীতি ফেলে আসা কোন যুবকের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। অথচ বাংলা ছবি দক্ষিণ কলকাতার ঘেরাটোপেই কার্যত নির্বাসন নিয়েছে। মালায়ালাম, তামিল, তেলেগু, কন্নড় ছবি কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে সাধারণ প্রান্তিক মানুষের গল্পও সমান তালে বলছে 'বাহুবলী' কিংবা 'ট্রিপল আর'- এর পাশাপাশি।
Comments
Post a Comment