নববর্ষ ১৪২৯
আজ নববর্ষ। সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাড়ির উল্টোদিকে মাঠে হাজির। পয়লা বৈশাখ শুরু হবে গোলপোস্ট পুজো দিয়ে। সারা বছর ধরে মাঠে দাপিয়ে ফুটবল খেলার প্রস্তুতি আজ শুরু। পোস্টের গোড়ায় ফুল, ধূপকাঠি দেখিয়ে মিষ্টি বিতরণ হবে। মিষ্টি মুখে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসা। নাকেমুখে খাবার গুঁজে দশটা বাজতে বাজতেই রোদের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে মাঠে খেলতে নেমে পড়তে হবে। এভাবে ঘন্টা দু'য়েক কাঠ কয়লার মত পুড়ব। গলা শুকিয়ে রাজস্থানের মরুভূমি হওয়া না পর্যন্ত খেলোয়াড় হওয়ার রেওয়াজ চলতে থাকবে। খেলা শেষ করেই মাঠের পাশে বিশাল ঝিলে একে একে সকলে ঝুপঝুপ করে শূন্যে উল্টো ডিগবাজি খেয়ে আছড়ে পড়ছি। গলা পর্যন্ত জলে ডুবে এক সাবানে সকলের রগরানো চলছে, বিকালে এরকম হনুমানের মত মুখ হলে চলবে না। এসব করে বাড়িতে যখন ফিরেছি পেটে আগুন জ্বলছে। যাই পাতে দিচ্ছে নিমেষে সাবাড়! এমনিতেই মা আজ বাড়িতে সামান্য হলেও সুস্বাদু খাবার রান্না করেছে। খাচ্ছিও দ্বিগুণ। একটু দুপুরে আরাম করেই আবার মাঠে ফুটবল খেলতে দৌড়। সকালে পুজোর সময় একমনে ঠাকুরকে ডেকে বলেছি এমন একটা কিছু করো যাতে এই পায়ে সাইসাই করে গোল তাক করে যেন বল শ্যুট করতে পারি। কিন্তু না; ঠাকুর আমার আবেদন যে গ্রহণ করেননি খেলা শেষ হতেই বুঝতে পারি। কিন্তু নৈরাশ্য গ্রাস করার তখন সময় কই! সন্ধ্যে হল বলে। সবাই টিউবওয়েলের দিকে দৌড়াই গামছা নিয়ে। গরমে বরফের মত ঠান্ডা জল। একজন পাম্প করে অন্যজন স্নান। বাড়ি ফিরেছি তখন সন্ধ্যে প্রায় সাতটা। ভালো করে মুখে ঘাড়ে পাউডার ঘষে আগের দিন চৈত্র সেলে কেনা প্রিয় ডব্লিউ. ডব্লিউ.এফ তারকার ছবি প্রিন্ট করা টি-শার্ট গলিয়েই আসল উদ্দেশ্য রওনা দি। পরিচিত দোকানে মিষ্টির প্যাকেট বিতরণ হবে। দোকানিদের সারা বছরের হিসাব মিটিয়ে নতুন করে পথচলা শুরু আজ। প্রায় দুটো প্যাকেট কম করে জোগাড় হয়ে যায়। সাথে বোতলে কোল্ডড্রিংকস। সেই জিনিস যে কতটা সে বয়সে লোভনীয় বস্তু ছিল আজ লিখে বোঝানো মুশকিল। সেই সময়ে খুব একটা বাড়িতেও আসতো না। এসব সামলে বাড়ি যখন ফিরেছি ঘড়ির কাঁটা রাত ৯'টা ঘরে। ফিরে শুকতারা খুলে বসি। সবকটা মিষ্টি পেটের ভেতর চালান হতে থাকে। রাতে আর খিদে পায়না। বই পড়তে পড়তে দু'চোখ লেগে আসে। ঘুমের ঘোরে মায়ের বকুনি শুনতে পাচ্ছি, না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য। আমি তখন গোলপোস্ট তাক করে একের পর এক গোল করে চলেছ।
শুভ নববর্ষ।
Comments
Post a Comment